ব্যস্তময় দিন শেষে আমরা অনেকটা ক্লান্ত শরীর ও মন নিয়েই ঘরে ফিরে আসি। সারা সপ্তাহের ধকলের পর শরীর অকেজো আর মন খানিকটা বিষণ্ণ হয়ে ওঠে । তাই ছুটির দিনগুলোতে হামাগুড়ি দিয়ে বিশ্রাম নিতে কার না ইচ্ছে করে ? তবে এই ছুটি কিংবা অবসর সময়কে (leisure time) কাজে লাগিয়ে নতুন কিছু শেখা কষ্টের কিছু নয়।
যেহেতু বর্তমান যুগ প্রতিযোগিতার যুগ, কাজেই প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের কাছে অতি মূল্যবান। আপনি যে সময়টা ঘুম দিয়ে কাটিয়ে দিচ্ছেন, ঠিক সে সময়েই আপনার কোন এক বন্ধু নতুন কিছু শিখে আপনার থেকে এক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছে। একটু ভেবে দেখুন তো, ২৪ ঘন্টায় আপনি নিজেকে ডেভেলপ করতে কি কি করেছেন ?
নিজের অবস্থান সম্পর্কে তখনই ধারণা পাওয়া যাবে, যখন আপনার আশেপাশের মানুষগুলোর সাথে নিজেকে তুলনা করবেন। তুলনা কোন খারাপ কিছু নয়, তুলনা থেকেই আগ্রহের সৃষ্টি, আর আগ্রহ থেকে চর্চা। তাই অবসরে গা না ভাসিয়ে নতুন কিছু চর্চা করুন। অনেকেই ভেবে পান না, ছুটির দিনগুলো বা অবসরে কি করবেন। কিভাবে ছুটির দিনগুলো চমৎকার ভাবে কাটানো যেতে পারে সে নিয়েই আজকের এই লেখা।
বই হতে পারে অবসরের সেরা বন্ধু
এটি হলো জীবনের প্রতিচ্ছবি , মানুষের পরম বন্ধু। জ্ঞানের পিপাসা মেটাতে, বই থেকে দারুণ কিছু আর কি হতে পারে ? বই পড়ার অভ্যাস শুধু আপনার জ্ঞানের পরিসরই বৃদ্ধি করবে না, বরং এটা আপনার কল্পনাশক্তি, সৃজনশীলতা, মনোযোগ, শব্দ ভান্ডারও বৃদ্ধি করবে। পৃথিবীর সফল ব্যক্তিত্ববর্গের সফলতার প্রধান চাবিকাঠি হলো এই ‘বই’ । অবসরে আপনার পছন্দের বই পড়ার পাশাপাশি এই বই গুলোও পড়ে নিতে পারেন। আশাকরি বইগুলো আপনাদের ভালো লাগবে।
The 4 Hour workweek – Timothy Ferris
Hatching Twitter- Nick bilton
Rich dad Poor dad – Robert Kiyosaki
The $100 Startup – Chris Guillebeau
The Lean Startup – Eric Ries
Hacking Growth -Sean Ellis & Morgan Brown
The Power of Habit- Charles Duhigg
Moby Dick – Herman Melville
The Picture of Dorian Gray – Oscar Wilde
The Tenant of Wildfell Hall- Anne Bronte
ভালো বই পড়া মানে গত শতাব্দীর সেরা মানুষদের সাথে কথা বলা
ভ্রমণে বাড়ে আত্নবিশ্বাস
জ্ঞান অর্জন কখনোই ক্লাসরুমে বা বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং চারপাশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেক কিছু যা থেকে শেখা যায়। ছুটির দিনে হারিয়ে যেতে পারেন দূর অজানায়, হিমালয়ের পাদদেশে কিংবা কোনো এক গহীন বনে। ভ্রমণে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, এছাড়া দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা, পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা, নতুন কিছু জানার আগ্রহ সৃষ্টি হয়।
ভ্রমণ নিয়ে বিখ্যাত সাংবাদিক ও লেখক মার্ক টোয়েন বলেছেন,
‘আজ থেকে বিশ বছর পর আপনি এই ভেবে হতাশ হবেন যে,আপনার পক্ষে যা যা করা সম্ভব ছিল তা করতে পারেননি। তাই নিরাপদ আবাস ছেড়ে বেরিয়ে পড়ুন। আবিষ্কারের জন্য যাত্রা করুন,স্বপ্ন দেখুন আর শেষমেশ আবিষ্কার করুন’
অবসরে স্কিল ডেভেলপ
ধরে নিন, আপনি কলেজ পেরিয়ে ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছেন, ক্লাসের প্রথম দিনই আপনাকে একটি টপিকের উপর প্রেজেন্টেশন দিতে বলা হলো কিংবা আপনাকে স্টেজে দাঁড়িয়ে সকলের উদ্দেশ্যে ইংরেজিতে কিছু বলতে বলা হলো। ব্যাপারটা কেমন হবে যদি আপনার স্পোকেন ইংলিশ অথবা প্রেজেন্টেশন স্কিল না থাকে ? লজ্জায় পরে যাবেন তাই না ?
আবার ধরুণ, আপনি গ্র্যাজুয়েট শেষ করে নতুন চাকরিতে জয়েন করেছেন। আপনার বস আপনাকে একটি সিডিউলার তৈরি করতে বললো এক্সেল সীটে। অথবা আপনাকে ডাটা এন্ট্রির একটি কাজ দিলো। অথচ, আপনার মাইক্রোসফট অফিস টুলস কিংবা ডাটা এন্ট্রি সম্পর্কে তেমন কোন ধারণাই নেই। কেমন লাগবে যদি প্রথমেই এভাবে হোঁচট খান ?
শুধুমাত্র কাগজের একটা সার্টিফিকেট ক্যারিয়ারে নিজেকে মেলে ধরার জন্য যথেষ্ট নয়। এর সাথে প্রয়োজন আনুষঙ্গিক কিছু দক্ষতা। আজই একটি তালিকা করে ফেলুন, আপনার এক্সট্রা কোন বিষয়গুলোতে দক্ষতা রয়েছে। কি জানেন, কি জানেন না, আরও কি জানা উচিত সেসব নিয়ে নিজেকে একবার প্রশ্ন করুন।
কাজেই অবসর সময় পেলেই বিছানাতে গড়াগড়ি না করে, নিজেকে নতুন কিছুর জন্য ঝালাই করে নিন। প্রস্তুত করে নিন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য। যে স্কিলগুলো আয়ত্ত করা আমাদের সকলের জন্য অতীব জরুরিঃ
- পাবলিক স্পিকিং
- স্পোকেন ইংলিশ
- মাইক্রোসফট অফিস টুলস
- প্রেজেন্টেশন স্কিল
- রাইটিং স্কিল
- আত্নরক্ষামূলক স্কিল ( যেমনঃ সাঁতার, সাইকেল চালানো, ক্যারাতে, ড্রাইভিং )
- বিভিন্ন কম্পিউটার সফটওয়্যার স্কিল ( যেমনঃ ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর )
- বিজনেস স্কিল ( যেমনঃ ডিজিটাল মার্কেটিং )
- ইমেইল রাইটিংসহ আরও অনেক কিছু
বিনোদনে হবে জ্ঞান অর্জন
আমরা প্রায়ই মুভি দেখি, গান শুনি কিংবা ফেইসবুক, ইউটিউব ব্রাউজ করি। বিনোদনের এই খোঁড়াক থেকে নতুন কিছু শেখা সম্ভব। অবসরে আমরা বিভিন্ন শিক্ষণীয় জিও গ্রাফিক অথবা সায়েন্স ফিকশন টিভি প্রোগ্রাম (যেমনঃ Man vs. Wild, Superhuman, Taboo, In the Womb, Science of stupid, The Brain Games, Planet Earth, How the universe works ) দেখতে পারি।
এছাড়া বিভিন্ন রান্নার অনুষ্ঠান, খবর সম্প্রচার কিংবা বিতর্কমূলক অনুষ্ঠান দেখেও অনেক কিছু শেখা সম্ভব। মুভির ক্ষেত্রে সামাজিক, বায়োগ্রাফিক, হিস্টোরিক্যাল, যুদ্ধ সংক্রান্ত অথবা ফিকশন টাইপ সিরিয়ালও দেখে নিতে পারি। অর্থাৎ, যেকোনো কিছুই হতে পারে জ্ঞান অর্জনের উৎস ।
লিখেছেনঃ মুশফিকুর রহমান